আয়েশার বর্ণনায় গত এক বছরের নানা চাঞ্চল্যকর তথ্য

দেশের দক্ষিণের জেলা বরগুনার হতভাগী তরুণী আয়েশা আক্তার মিন্নি। দীর্ঘ দিনের প্রেমের সম্পর্কের পর দুই পরিবারের সম্মতিতে মাত্র দুই মাস আগে রিফাত শরীফের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। কিন্তু সুখ তার কপালে সইলো না। কারণ গতকাল বুধবার স্ত্রীকে উত্যক্তের প্রতিবাদ করায় মিন্নির সামনেই রিফাত এর জীবন শেষ করে দুর্বৃত্তরা।

দিন-দুপুরে শত শত মানুষের সামনে টগবগে এক যুবককে আঘাতের দৃশ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও মিডিয়া বদৌলতে দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে গেছে। ঘৃণ্য এই সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে ফুঁসে উঠেছে মানুষ। ঘটনার একদিন পর আজ গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেছেন অনেক চেষ্টা করেও স্বামীকে বাঁচাতে না পারা হতভাগী আয়েশা। বিবিসি বাংলাকে তিনি বলেছেন, গত এক বছর ধরে কলেজে আসা যাওয়ার পথে স্থানীয় এক যুবক তাকে উত্যক্ত করতো।

তিনি বলেন, ‘ওই ব্যক্তি শুরু থেকেই বিয়ে করার জন্য চাপ দিয়ে আসছিল।’ অন্যথায় তাকে ও তার পরিবারের সদস্যদের হ*** করার হুমকি দিয়েছিল বলেও মিন্নি অভিযোগ করেন ওই যুবকের বিরুদ্ধে। ‘আমাকে হুমকি দিতো- কথা না বললে, বলতো মাইরে ফালাবে। তার সাথে কথা বলতে হইবে, ঘুরতে যাতি হইবে,’ বলেন আয়েশা।

তবে সাক্ষাৎকারে ওই বখাটের নাম উল্লেখ করেননি মিন্নি। তবে গণমাধ্যমে প্রকাশিত অন্যান্য প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, নয়ন বন্ড নামের এক সন্ত্রাসীই তাকে উত্যক্ত করতো। আয়েশা আক্তার বলেন, ‘নাইলে বলতো, তোমার ভাইরে মাইরে ফালাবো। তোমার বাপেরে কোপাবো। এইসব কথা বলতো।’

তিনি আরো অভিযোগ করেন, ‘একবার আমাকে রাম দা ধরসিলো। পরে আমি ভয় পাইয়া বাসায় আলাপ করলাম।’ পরে আয়েশার পরিবার রিফাতের পরিবারের সঙ্গে কথা বলে দুইজনের বিয়ের ব্যবস্থা করে। গেল দুই মাস আগেই আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের বিয়ের অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয়।

কিন্তু তাতেও শেষ রক্ষা হলো না। কারণ বিয়ের পরও আয়েশার ওপর হয়রানি বন্ধ হয়নি। তাকে সামনা সামনি বা ফোনে বিভিন্নভাবে হুমকি দিতে থাকে ওই অভিযুক্ত যুবক। ক্রমাগত হুমকি-ধমকির মুখে আয়েশা আক্তারও কোনো ধরনের আইনি সহায়তা চাওয়ার সাহস পাননি বলে জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আগে থেকেই সবাই জানে যে, সে মানুষ কোপাইতো… ওরে সবাই ভয় পাইতো। আমিও ওই ভয়েতে পুলিশের কাছে যাই নাই।’

কয়েকদিন রিফাতের (স্বামী) সাথে ওই যুবকের রাস্তায় কথা কাটাকাটি হয় বলে জানান আয়েশা। সর্বশেষ গতকাল তারা এই সংঘবদ্ধ হা*** চালায়। হা***কারীদের মধ্য থেকে তিনজনকে চিনতে পারেন আয়েশা আক্তার। পরে পুলিশের কাছে তিনি ওই তিনজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন। তিনি বার বার একটা দাবিই জানান, আর সেটা হলো- দ্রুত ও সুষ্ঠু বিচার যেন নিশ্চিত হয়। আয়েশা আক্তার বলেন, ‘আমি আমার স্বামী হ***র বিচার চাই।’